Saturday, July 12, 2014

মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تُقْسِطُواْ فِي الْيَتَامَى فَانكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلاَّ تَعُولُواْ 03 আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।

কোরআন উঠে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত হবে না

২৭৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কুরআন যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। তারপর আকাশের চর্তুদিকে মৌমাছির গুণ গুণ শব্দের মত কুরআনের গুণ গুণ শব্দ হতে থাকবে। তখন মহান ও প্রতাপশালী রব বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” কুরআন বলবে, “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়েছিলাম এবং তোমার কাছে ফিরে আসব। আমাকে পাঠ করা হয়, কিন্তু আমার কথামত আমল করা হয় না।” তখন কুরআনকে উঠিয়ে নেয়া হবে।” দায়লামী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। আল্লাহর মুঠোর মধ্যে আকাশ ও পৃথিবী ২৭৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় কেয়ামতের দিন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ সাতটি আকাশ এবং পৃথিবী নিজের মুঠের মধ্যে ধারণ করে বলবেন, “আমি আল্লাহ্‌, আমি অশীম দয়ালু, আমি রাজাধিরাজ, আমি পরম পবিত্র, আমি শান্তি, আমি রক, আমি শক্তিশালী ও মতাবান, আমি গর্বের অধিকারী। আমিই পৃথিবী সৃষ্টি করেছি যখন তা কিছুই ছিল না, আমি পুনরায় তা ফিরিয়ে আনব। শাসকগণ কোথায়? জুলুমকারীগণ কোথায়?” এ হাদীসটি আবুশ শায়খ সংগ্রহ করেছেন। উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হওয়া ২৭৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আর সর্বপ্রথম যাকে পোশাক পরান হবে, তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম খলীল (আ) মহান আল্লাহ্‌ বলবেন, “আমার বন্ধু ইবরাহীমকে পোশাক পরাও, লোকজন যেন তার মর্যাদা বুঝতে পারে।” তারপর অপরাপর লোককে তাদের আমলের মান অনুযায়ী পোশাক পরান হবে।” আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটিতলাক ইবনে হাবীব থেকে তিনি তার দাদা থেকে সংগ্রহ করেছেন। অংগ প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য ২৭৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমরা আমাকে এটা জিজ্ঞেস কর না, কি জন্য আমি হেসেছি। কেয়ামতের দিন বান্দা ও তার রবের মধ্যে যে তর্ক- বিতর্ক হবে তাতে আমি আশ্চর্যম্বিত হয়েছি। বান্দা বলবে, “হে আমার রব! তুমি কি আমাকে প্রতিশ্রতি দাওনি য, আমার প্রতি তুমি জুলুম করবে না।?” আল্লাহ বলবেন, “হ্যাঁ”। বান্দা বলবে, “তবে আমি আমার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া অপর কারো সাক্ষ্য মানব না।” তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, “আমি নিজেও কি যথেষ্ট সাক্ষী নই? অথবা মর্যাদাশীল লেখক ফেরেশতারাও কি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট নয়?” বান্দা বহুবার তা নাকচ করে দেবে। তখন তার মুখে মোহর লাগান হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে থাকবে, পৃথিবীতে সে কি করেছিল। তখন বান্দা (মনে মনে) বলবে, “তোরা দূর হয়ে যা, তোরা ধ্বংস হ, তোদের জন্যই আমি সংগ্রাম করেছিলাম।” এ হাদীসটি হাকেম সংগ্রহ করেছেন। পাপ পূণ্য বিনিময় ২৮০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত প্রতিপালক বলেছেন, “বান্দার পূণ্য ও পাপসমূহ উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তার কতগুলো পরসপরের সাথে বিনিময় করা হবে। অতপর যদি একটি পূণ্যও অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেবেন।” হাকেম এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। আমল অনুযায়ী মর্যাদাঃ ২৮১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে, অতঃপর তার গোলামকে তার চেয়েও বেশি মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখতে পাবে। সে তখন আরয করবে, “হে আমার রব! গোলাম আমার চেয়েও উচ্চতর মর্যাদায় আসীন আছে।” আল্লাহ বলবেন, “তাকে আমি তার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। আর তোমাকে তোমার আমলের প্রতিদান দিয়েছি।” দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে ২৮২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বেহেশত ও দোযখ কলহ করল। বেহেশত বলল, আমার ভেতরে দূর্বল ও দারিদ্রগণ প্রবেশ করবে এবং দোযখ বলল, জালিম ও অহংকারীগণ আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। অনন্তর আল্লাহ্‌ জাহান্নামকে বললেন, “তুমি আমার আযাব। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি শাস্তি দেই।” আর বেহেশতকে বললেন, “তুমি আমার রহমত। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করি। আর তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নিজ নিজ স্থান নির্ধারিত রয়েছে।” তিরমিযী ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। তারা একে হাসান ছহীহ বলেছেন। ২৮৩ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, “এ আমার করুনা, এর দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করি, অর্থাৎ তা হচ্ছে জান্নাত।” শায়খাইন এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন। জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রার্থী ২৮৪ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) নিশ্চয়ই এক লোককে জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে। তাকে দেখে জাহান্নাম সংকুচিত হতে থাকবে এবং তার একাংশ অন্য অংশকে ধরে রাখবে। তখন দয়াময় আল্লাহ্‌ তাকে বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” জাহান্নাম বলবে, “পৃথিবীতে সে সর্বদা আমার আযাব থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করত। মোবারক ও মহান আল্লাহ্‌ তখন বলবেন, “আমার বান্দাকে ছেড়ে দাও।” দায়লামী এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস (সাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৮৫ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) সুমহান আল্লাহ্‌ (ফেরেশতাদেরকে) বলেবেন, “আমার বান্দার আমলনামার প্রতি দৃষ্টি ফেল। অতঃপর যাকে তোমারা দেখ যে, সে আমার কাছে বেহেশত চেয়েছিল তাকে আমি বেহেশত দেব, আর যে আমার কাছে জাহান্নাম থেকে পরিত্রান চেয়েছিল, আমি তাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেব।” আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। জান্নাতীর চাষাবাদঃ ২৮৬ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বেহেশতীদের মধ্যে এক লোক তার প্রতিপালকের কাছে চাষাবাদ করার অনুমতি চাইবে। আল্লাহ্‌ তাকে বলবেন, “তুমি যা কিছু চেয়েছিলে তা কি এখানে নেই, ” সে বলবে, হ্যাঁ সব কিছু আছে, কিন্তু আমি চাষাবাদ করতে ভালবাসি।” তারপর সে বীজ রোপন করবে, অনন্তর চোখের পলকে বিজ অঙ্কুরিত হবে, চারা বড় হবে, ছড়া বের হবে এবং ফলস কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। তারপর তা পাহাড়ের ন্যায় স্তুপীকৃত হবে। তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, “হে আদম সন্তান! লক্ষ্য কর। কোন কিছুই তোমাকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না।” আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৮৭ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ হিসাবের জন্য মানুষদেরকে সমবেত করবেন। অতঃপর দরিদ্র মু’মিনগণ কবুতর যেরূপ তাড়াতাড়ি উড়ে, সেরূপ তাড়াতাড়ি আসবে। তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা হিসাবের জন্য দাড়াও।” তারা বলবে, “আমাদের কাছে কোন হিসাব নেই। আর হিসাব নেয়া যাবে এমন কিছু কি আপনি আমাদেরকে দান করেছিলেন? তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছি।” অতএব তাদের জন্য বেহেশতের দ্বার খুলে দেয়া হবে। অনন্তর অন্যদের চেয়েও তারা সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।” আবূ ইয়ালা, তিবরানী ও ইবনে আসাকির এ হাদীসটি হযরত সাদ ইবনে আমের ইবনে হুজাইমের (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৮৮ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন গরীব মুসলমানগণ কবুতরের ন্যায় তাড়াতাড়ি চলবে। তাদেরকে বলা হবে, “হিসাবের জন্য থাম।” তারা বলবে, “আল্লাহর কসম! আমরা এরূপ কিছুই রেখে আসিনি, যার জন্য আমাদের হিসাব নেয়া হবে।” তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছে।” এতএব তারা অপরাপরদের চেয়ে সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।” তিবরানী এ হাদীসটি হযরত সাঈদ ইবনে আমের ইবনে হুজায়ম (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৮৯ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন নিশ্চয় জনৈক বান্দা তার আমলনামা খোলা অবস্থায় দেখবে এবং তার দিকে তাকাবে। তাতে সে এরূপ কতকগুলো পূণ্য দেখতে পাবে, যা সে করেনি। সে তখন বলবে, “ইয়া রব! আমার জন্য এটা কোথা থেকে এল?” আল্লাহ্‌ বলবেন, “সে গীবৎ সমূহ, তোমার বিরুদ্ধে লোকেরা যা বলাবলি করেছিল অথচ তুমি তা অনুভব করনি।” আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি হযরত শাবীব ইবনে সা’দা বালাওয়ী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

বিপদে ধৈর্যধারণ সম্পর্কে

২৩৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমি আমার কোন বান্দার সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু কেড়ে নেই না। (কেড়ে নিলে) তার প্রতিদান বেহেশত ছাড়া আর কিছুই আমার পছন্দনীয় নয়।” আবূ নুয়াঈম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি যখন আমার কোন বান্দার সবচেয়ে প্রিয়বস্তু দু’টি চোখ কেড়ে নেই, অতঃপর সে ধৈর্য্য ধারণ করে এবং পূণ্যের আশা করে, তাকে আমি বেহেশত ছাড়া আর কোন পুরস্কার দিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না। তিবরানী ও হাকেম এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই কোন বান্দা যখন রোগগ্রোস্ত হয় তখন আল্লাহ্‌ তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, “আমার বান্দাকে আমি আমার কায়েদ খানা সমূহের একটিতে আবদ্ধ করেছি। অতঃপর আমি যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে আমি তাকে ক্ষমা করব। আর তাকে যদি সুস্থ করি, তবে সে এমন অবস্থায় উঠে বসবে যেন তার কোন পাপ নেই।” হাকেম ও তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- পূণ্য ভান্ডার তিনটি - দান-সাদকা গোপন রাখা, মুসবিত গোপন রাখা এবং রোগ সম্বন্ধে অভিযোগ গোপন রাখা। পরীক্ষা করি, অন্তর সে ছবর এখতিয়ার করে এবং আমার বিরুদ্ধে তার দর্শকদের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের করে না, আমি তখন তাকে বিপদমুক্ত করি এবং তার আগের গোশত ইত্তম গোশত এবং তার আগের রক্ত উত্তম রক্তে পরিবর্তন করে দেই। আর যদি আমি তাকে ছেড়ে দেই, তবে তাকে এমনভাবে ছেড়ে দেই যে, তার কোন পাপ থাকে না। আর তার যদি (মৃত্যু) ঘটাই, তবে আল্লাহর করুনার দিকে তাকে টেনে নেই।” তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার বিশ্বাসী বান্দার জন্য আমার কাছে বেহেশত ছাড়া আর কোন প্রতিদান নেই যখন আমি পৃথিবীবাসীদের মধ্য থেকে তার প্রিয়তম বন্ধুকে ছিনিয়ে নেই এবং তারপরও সে আমার প্রতি আস্থাশীল থাকে।” আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মুসলমানদের এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যাকে শারীরিক অসুস্থতার মাধ্যমে বিপদগ্রস্থ করা হয় তার বিষয়ে মহান ও মতাশালী আল্লাহ বান্দার আমল লেখক ফেরেশতাকে ডেকে বলেন, “প্রত্যেক দিন ও রাতে এ বান্দার আমলনামায় সে পরিমাণ পূণ্য লিখ যা সে সুস্থাবস্থায় অর্জন করত এবং যতদিন সে আমার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে ততদিন পর্যন্ত এমন করতে থাক।” আহমদ এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যখন কোন বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তার ফেরেশতাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছ?” তারা বলেন, “হ্যাঁ”। আল্লাহ তখন বলেন, “তোমরা কি তার হ্নদয়ের ফুল ছিনিয়ে নিয়েছ?” তারা বলেন, “হ্যাঁ” তখন সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা তখন কি বলেছিল?” তারা বলে, সে তোমার হামদ বা প্রশংসা করেছিল (আলহামদুলিল্লাহ এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তখন আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার এ বান্দার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মান কর এবিং তার নাম রাখ - ‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসার ঘর।” তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ মুসা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্‌ বলেন, “আমি যখন পৃথিবীতে আমার বান্দার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই, তখন ওর বিনিময় আমার নিকট বেহেশত ছাড়া আর কিছুই নয়।” তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ পূণ্যবানদের রক ফেরেশতাদের প্রতি এ প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেন, “দুঃখকালীন অবস্থায় আমার বান্দার বিরুদ্ধে তোমরা কোন কিছু লিখ না।” দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ্‌ তাবারাক ওয়াতাআ’লা বলেছেন, আমি যখন আমার বান্দাদের মধ্য কারো প্রতি কোন বিপদ পাঠাই তার দেহের উপর অথবা তার সন্তানের প্রতি কিংবা তার সম্পদের উপর, তারপরও সে উত্তম ধৈর্যের সাথে সেই বিপদকে গ্রহণ করে, কেয়ামত দিবসে আমি লজ্জা অনুভব করি যে, কি রূপে আমি তার জন্য পাল্লা স্থাপন করব এবং তার পাপ পূণ্যের খতিয়ান তার সামনে মেলে ধরব।” হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৪৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কোন বান্দা যখন রোগগ্রস্থ হয়, তখন মহান আল্লাহ্‌ তার কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠান এবং বলেন, “দেখ এ রোগী রোগ পরিদর্শনকারীদেরকে কি বলে?” অনন্তর সে যদি তাদের প্রবেশকালে আল্লাহর প্রশংসা করে, তবে ফেরেশতারা তা আল্লাহর দরবারে নিয়ে যান। আর আল্লাহ্‌ তা অবগত আছেন। তখন সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দার জন্য আমার সিদ্ধান্ত এই যে, আমি তার দেহের গোশত উত্তম গোশতে এবং তার রক্ত উত্তম রক্তে পরিবর্তন করব এবং আমি তার থেকে তার পাপসমূহ দূর করে দবে।” দারু কুতনী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২৫০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, “আমি ভগ্ন-হৃদয় লোকদের কাছাকাছি অবস্থান করি।” গাযযালী (রা) এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন। ২৫১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “বিপদগ্রস্তদেরকে আমার আরশের কাছাকাছি কর। নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভালোবাসি।” এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন। ২৫২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন -“হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করনি।” বান্দা বলবে -“হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?” তিনি বলবেন -“তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?” “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।” বান্দা বলবে -“হে আমার রব! তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি রিরূপে আহার করাব?” তিনি বলবেন -“তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বন্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে বে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?” “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।” বান্দা বলবে -“হে আমার প্রভূ! তুমি তো রব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কিভাবে পান করাব?” তিনি বলবেন, “তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।” এ হাদীসটি হযরত আবূ হোরায়রা (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন। রূগ্ন ব্যক্তির খোজ-খবর নেওয়া ২৫৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “প্রত্যেক বান্দা, যে তার কোন ভাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দেখতে যায়, তাকে জনৈক ঘোষক ফেরেশতা এই বলে আসমান থেকে সম্বোধন করেন, “তুমি সুখী হও এবং তোমার জন্য বেহেশত সুখের হোক।” মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্‌ তখন তার আরশের সভাসদ ফেরেশতাগণকে ডেকে বলেন, “এক বান্দা আমার উদ্দেশে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করেছে। সুতরাং তাকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার উপরে; আর সুমহান আল্লাহ তাঁর এ দায়িত্ব পূরণ করার জন্য বেহেশত ছাড়া আর কোন দাওয়াত পছন্দ করেন না।” আবূ ইয়ালা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। বার্ধক্য আল্লাহর নূর ২৫৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই বার্ধক্য আমার নূরসমূহের একটি নূর। আমার নূরকে আমি আমার আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে লজ্জা বোধ করি।” আবুশ শায়খ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

পারসপরিক লেনদেন সম্পর্কে

২২৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ইনজীলে লেখা আছে, “তুমি যেরূপ ব্যবহার কর তোমার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করা হবে, আর তুমি যেমন পাল্লা ওজন কর। পাল্লা দিয়ে তোমাকে সেরূপ ওজন করা হবে।” এ হাদীসটি হযরত ফুয়ালা ইবনে উবাইদ (রা) থেকে মুসনাদির ফিরদাউসে লেখা হয়েছে। ২২৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ বলেছেন, “এরূপ তিনজন লোক আছে কেয়ামতের দিন যাদের সাথে আমি কলহকারী সাজব। প্রথমত সে ব্যক্তি, যে আমার নাম নিয়ে ওয়াদা করেছে, তারপর ওয়াদা ভঙ্গ করে প্রতারণা করেছে। দ্বিতীয়ত সে ব্যক্তি, যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়েছে। তৃতীয়ত সেই জন, যে কোন শ্রমিক নিযুক্ত করেছে এবং তার কাছ থেকে পুরো পরিশ্রম ও কাজ আদায় করে নিয়েছে, তৎপর তাকে তার পারিশ্রমিক দেয়নি।” বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ২২৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “দু’জন অংশীদারের মধ্যে আমি তৃতীয় অংশীদার, যে পর্যন্ত একজন তার সাথীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করে। অতঃপর একজন যখন তার সাথীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন আমি তাদের দু’জনের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসি।” আবু দাঊদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে আল্লাহ লজ্জা পান

৬৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জিবরাঈ’ল (আ) আমাকে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ সম্পর্কে জানিয়েছেন, আল্লাহ্‌ বলেছেন, “আমার ইযযত, জালাল ও একত্বের কসম! আমার সাথে আমার বান্দাগণের যে প্রয়োজন রয়েছে এর কসম! এবং আমার আরশের উপর আসন নেয়ার কসম। নিশ্চয় আমি আমার সে বান্দা ও বান্দিকে শাস্তি দতিে লজ্জা বোধ করি যারা ইসলামে অবস্থান করে বয়-বৃদ্ধ হয়েছে। অতঃপর রাসূল (সাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। আরয করা হল, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আপনি কাদছেন কেন? তিনি বললেন, “আমি সে ব্যক্তির জন্য কাঁদি যার জন্য আল্লাহ লজ্জ বোধ করেন। অথচ মহান আল্লাহর সম্মুখে সে লজ্জিত হয় না।” খালীল ও রাফিঈ’ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ৭০ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার যে বান্দা আমার দিকে দু’হাত তুলে ধরে তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে আমি শরম পাই।” ফেরেশতাগন আরয করেন, “হে আমাদের প্রতিপালক! সে এর উপযুক্ত নয়।” মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু আমি তো তাকওয়া ও মার অধিকারী।” আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, নিশ্চয়ই আমি তাকে মার্জনা করে দিয়েছি। হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ৭১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ ্‌ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি সেই বান্দা ও বাঁদীর নিকট লজ্জিত- যারা ইসলামে অবস্থান করে বড় হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামে থেকে যে বান্দার দাড়ি সাদা হয়েছে এবং ইসলামে অবস্থান করে যে বাঁদীর চুল পেকেছে। এর পরও আমি কি করে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেব।” আবূ ইয়ালা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।

লজ্জা কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনে

ইমেইল ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “লজ্জা কল্যাণই নিয়ে আসে।” [বুখারী: ৬১১৭, মুসলিম: ৩৭] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: “লজ্জার সম্পূর্ণটুকু মঙ্গলই মঙ্গল,” অথবা বলেছেন: “সম্পূর্ণ লজ্জাই মঙ্গলজনক।”

সুন্দর ইসলামী জীবন যাপনের সুফল

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন: “যখন বান্দা ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলামটা সুন্দর হয়, তখন আল্লাহ্ তার অতীতের সমস্ত গোনাহ্ ক্ষমা করে দেন। এর পর ভালো-মন্দ কাজের এরূপ প্রতিদান দেয়া হয় যে, ভালোর বদলে দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত, আর মন্দের বদলে ঠিক ততটুকু গোনাহ্ দেন; তবে আল্লাহ্ তাও ক্ষমা করে দিতে পারেন।” [বুখারী: ৪১]